রাবিতা একটি কাগজের পোটলা বের করে জিজ্ঞেস করে ‘খাবেন?’
‘কী?’, জিজ্ঞেস করে মাহিন। পোটলা খুলতে খুলতে রাবিতা বলে, ‘পাকা – মিষ্টি আমড়া। আমি একটা খেয়েছি। খুব মজা।’
মাহিন মুচকি হাসে। ভাবে, কী পাগল মেয়ে। বাবা বেডে মরমর। সে ডাক্তারের রুমে ঢুকে আমড়া চর্চা করছে। ডাক্তার আর রুগিদের সম্পর্ক চিকিৎসা ওষুধপথ্য এসব নিয়ে হবে, সে কিনা …
মাহিনের ডাক্তারি ভাব দেখে রাবিতা বলে ‘ঠিক আছে, না খেতে চাইলে আমিই খাব। আচ্ছা বাবার প্রোগ্রেস বলেন তো ডাক্তার সাহেব।’
রাবিতা আজ শাড়ী পরে এসেছে। মনিপুরী। গোলাপি পাড়ের শাদা জমিনের ওপর জামদানি নকশা। গলায় শাদা মুক্তোর একটি হার। আসলও হতে পারে; নইলে আর্টিফিশিয়াল। কানে কিংবা নাকে কিছু নেই। এতটুকুই আলো ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট। মাহিনও ভেতরে একটা মোচড় অনুভব করে। সে বলে, ‘আমড়াটা টেবিলের ওপর রেখে দিন। আর, চলুন, পেশেন্টের কাছে যাই।’
শুধু আত্মীয়তার জোরেই নয়, মাহিনকে মেপেজোকেই প্রফেসর রায়হান বলেছেন, ‘হাইয়ার এডুকেশনের ব্যাপারে আমি তোমাকে হেল্প করব, তবে এখন তুমি আমাদের সাথে থাক। স্পেশালাইজড হেলথকেয়ারকে কমার্শিয়াল নয় বরং একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোল।’ প্রফেসর রায়হানসহ একদল প্রবাসী চিকিৎসক আধুনিক চিকিৎসা সেবার ব্রত নিয়ে উত্তরায় স্পেশালাইজড হেলথকেয়ার হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
দিন পনের আগে আফসান সাহেব এয়ারপোর্ট রোডে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় পড়লে তাকে স্পেশালাইজড হেলথকেয়ারেই নিয়ে আসা হয়। কাটা-ফাটা ছাড়াও আশঙ্কার বিষয় ছিল ব্রেন হেমারেজ। প্রথম ক’দিন থমথমে অবস্থা ছিল হাসপাতাল আঙ্গিনায়। পিতার দুর্ঘটনার খবর শুনে নাফিসও এক সপ্তাহর জন্য ছুটে এসেছিল আমেরিকা থেকে।
ফাড়া কেটে গেছে বলে এখন পরিবার-পরিজন সবাই হাঁপ ছেড়েছে, কিন্তু ঘনিষ্ঠদের কাছে থাকতেই হচ্ছে। গ্রাম থেকে নিয়ে আসা বাকের চাচা তো আছেনই। উপরন্তু রাহেলা বেগমকেও আসতে হচ্ছে; আর রাবিতার আসা-যাওয়া তো নৈমিত্তিক।
শোবার আগে রাবিতা মাহিনকে ফোন দেয়, ‘আপনাকে বেশি বিরক্ত করি, তাই না?’
‘হ্যাঁ, করেন।’ মা ভাত বেড়েছেন। মাহিন হাসপাতাল থেকে এসে শাওয়ার সেরে টেবিলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল। তাই কথা না বাড়ানোর জন্য কিছুটা রসিকতা করে রাবিতাকে ছোট্ট নির্মেদ একটি জবাব দিয়ে দেয়। ‘কী বললেন?’ রাবিতা ক্ষেপে যায়।
মাহিন বলে, ‘না, তেমন না, কিছুটা। আচ্ছা, রুগির অবস্থা তো ভালই দেখলাম; কোনো সমস্যা হয়নি তো?’
‘আরে, রুগির অবস্থা তো আপনি আমার চেয়ে ভাল জানেন’, রাবিতার কণ্ঠে কিছুটা উষ্মা। ‘আমি এমনিই ফোন দিলাম।’
‘ওহ, আচ্ছা। আপনি খাওয়া দাওয়া করেছেন?’, মাহিন বলে।
‘ধুর, আমি না খেয়ে থাকলে আপনি খাবার পাঠাবেন নাকি?’
মাহিন বোঝে রাবিতা কেন ফোন করে, হাসপাতালে আমড়া নিয়ে যায়। এরকম অনেকজনই করে। এমন হ্যাঁচড়প্যাঁচড়ে অনেক রুগিকেই সামাল দিয়ে তাকে আসল রুগিদের চিকিৎসা করতে হয়। তবে কেন জানি রাবিতাকে পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারে না মাহিন। সে বলে, ‘না, আমার খিদে পেয়েছে তো, এখন খেতে বসব।’
‘ওহ, তাহলে আর বিরক্ত করব না, তবে…’
রাবিতা থেমে গেলে মাহিন জিজ্ঞেস করে, ‘তবে কী?’
রাবিতা বলে, ‘না, থাক।’ সাথে সাথে আবার বলে, ‘ধুর, বলেই ফেলি। শুনুন, আমি তো শাড়ি পরি না। আজকে শখ করে মনিপুরী শাড়ি পরে গিয়েছিলাম। শাড়িটা কি আমায় মানিয়েছিল?’
তখন ডাইনিং টেবিল থেকে মায়ের আওয়াজ শোনা যায়, ‘কীরে, খাবার তো ঠাণ্ডা হয়ে গেল। কার সাথে এত কথা বলছিস?’
মা যেন মাহিনকে বাঁচালেন। সে বলে, ‘আসছি মা।’ ওদিকে রাবিতাকে বলে, ‘আপনার সাথে পরে কথা বলব, মা খাবার নিয়ে বসে আছেন।’
আফসান সাহেবের সৌভাগ্য যে প্রফেসর রায়হান নিজে তার মাথার অপারেশন করেছেন। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা হওয়াতে জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তিনি নিউ ইয়র্কে ফিরে যাবার আগে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর কবীরের হাতে এই কেস তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তবে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব মাহিনই পালন করে আসছে। রুগির অবস্থা এখন অনেক ভাল। অল্প খেতে পারছেন। কারুর সাহায্য নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটিও করছেন। ক্ষীণকণ্ঠে কথাবার্তাও বলছেন। তবে আরও কিছুদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে।
এ ক’দিনে মাহিনের ওপর আফসান সাহেবের মায়া পড়ে গেছে। ডাক্তারি দায়িত্বের বাইরেও খুবই আপন মনে হয় ছোকরাটাকে। দুদিন আগে একবার আফসান সাহেব মাহিনকে তার মা-বাবার কথা জিজ্ঞেস করেছেন। রাবিতা পাশে ছিল। সে বেকুবের মতো যোগ করেছে, ‘ওনারা দুই ভাই, কোনো বোন নেই।’ মেয়ের কথা শুনে আফসান সাহেব ভুরু বাঁকা করে তাকাতেই রাবিতা সিঁটিয়ে যায়। আফসান সাহেব স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারলে হয়তো মেয়েকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘তুই এসব জানলি কোত্থেকে?’ মাহিনই তখন ত্বরিত প্রসঙ্গ পাল্টানোর দায়িত্ব নেয়। সে বলে, ‘ডিনারের পর পরই ওষুধগুলো খেয়ে শুয়ে পড়বেন। আমি যাবার আগে আরেকবার দেখে যাব।’
এই অল্পদিনে মাহিন নিজের মধ্যে সামান্য পরিবর্তন অনুভব করছে। এটাই কি তবে দুর্বলতা? ছাত্রাবস্থায় এমন দুর্বলতার অনেক সুযোগ পেলেও সে দুর্বল হয়ে যায় নি। একটি দুর্দম মানসিক টানাপোড়েন তাকে দুর্বলতার দিকে ঝুঁকে পড়তে দেয়নি। কারণ বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে মাহিন দেখে আসছে তাদের সুখী পরিবারে কোথায় যেন এক বিরাট শূন্যতা বিরাজমান। পিতামাতার অমতে মুজাফফর সাহেবকে বিয়ের পর থেকে বাপের বাড়ির সাথে মায়ের সম্পর্ক চিরতরে টুটে যায়। এ সম্পর্ক জোড়া দেয়ার আগ্রহ কোনো পক্ষ থেকেই দেখানো হয়নি। কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। নানা নানী মারা যাওয়ার পর মা লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছেন। কিন্তু ছেলেদের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনও নানাবাড়ি নামক আনন্দনগরীর ছবি তাদের মানসপটে ফুটিয়ে তোলেননি। বরং নিজের দীর্ঘশ্বাস সারাজীবন নিজের বুকের ভেতর ছিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। সমাজ-কাঠামোর এই ভঙ্গুরতা মাহিনের মানসপটে গভীর রেখাপাত করেছে। তাই সে ভেবে রেখেছে যে বিয়েশাদীর কথা উঠলে এ দায়িত্ব সে তার মা-বাবার হাতেই ছেড়ে দেবে।
বাকের চাচা মাঝে মাঝে রেস্ট নিতে বাসায় গেলে রাহেলা বেগম হাসপাতালে থাকেন। সেদিনও বাকের চাচার অবর্তমানে রাহেলা বেগম স্বামীকে খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে বিছানায় পা ছড়িয়ে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। কেবিনের দরজায় আস্তে টোকা পড়তেই সোজা হয়ে বসে তিনি বলেন, ‘আসুন।’
তখন আস্তে করে দরজা খুলে মাহিন বলে, ‘সরি, আন্টি! ওষুধগুলো খাইয়েছেন তো?’
রাহেলা বেগম তখন বিছানা থেকে নেমে বলেন, ‘আরে আস, আস। হ্যাঁ হ্যাঁ নার্স ঠিকমতই খাইয়েছে। ভেতরে আস।’
মাহিন কেবিনে ঢুকতে ঢুকতেই বলে, ‘না, ঠিক আছে, আপনি এখন রেস্ট নিন।’
রাহেলা বেগম বলেন, ‘তুমি অনেক কষ্ট করছ বাবা…’
মাহিন সংকোচ করে বলে, ‘কী যে বলেন, এটা আমাদের দায়িত্ব।’
রাহেলা বেগম একটু এগিয়ে এসে বলেন, ‘আল্লাহ্ তোমাকে অনেক বড় ডাক্তার করুন। তো তোমার বাবা-মা ভাল আছেন তো? রাবিতা বলল, তোমার কোনো বোন নেই।’ তারপর একটু হেসে বলেন, ‘তাহলে তোমার মায়ের ওপর দিয়ে সব চাপ যাচ্ছে।’
রাবিতা প্রতিদিনই হাসপাতালে আসে। ক্লাস না থাকলে দুপুরের আগেই চলে আসে। মাহিনের সাথে দেখা হলেই বলে, ‘চলে এলাম, আজ ক্লাস নেই।’ মাহিন হাঁটতে হাঁটতে বলে, ‘তাই? ফাঁকি মারেননি তো?’ আবার কখনও হয়তো সে মাহিনের রুমে গিয়ে বলে, ‘জানেন, আজকে না আব্বা আম্মার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।’
রাবিতার প্রাণবন্ত আচরণ মাহিনের কাছে চপল ঝর্ণার মতোই মনে হয়। কিন্তু ঘরের খবর বাইরে চলে আসায় মাহিন কিছুটা বিব্রত হয়। তার মাথাটা একটু ঝিমঝিম করে। সে ভাবতে চেষ্টা করে ব্যাপারটা কোনদিকে গড়াচ্ছে। রাবিতা কি তাহলে কোনো স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে? আর তা যদিও করেও তাতে অবশ্য দোষের কিছু নেই। সোশ্যালজিতে অনার্স করা মেয়ে তো কচি খুকি নয়। তারপর মাস্টার্স করতে সেও নাকি তার ভাইয়ের মতো বাইরে চলে যাবে। বড় ব্যবসায়ী বাবার টাকা-পয়সার অভাব নেই, যেতেই পারে। তবে বাবা-মা’র নাকি শর্ত আছে, যেখানেই যাও বিয়ের পাট চুকিয়ে যেতে হবে। এসব কথা রাবিতাই মাহিনকে বলেছে। মাহিন তখন শোনার জন্যই শুধু তার কথাগুলো শুনেছে। কিন্তু এখন ঘটনার ঘনঘটায় পুরো ব্যাপারটা মাহিনের অন্যরকম মনে হচ্ছে।
মাস দেড়েকের চিকিৎসায় আফসান সাহেব অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছেন। একা একা হাঁটতে পারেন; কথাবার্তাও পরিষ্কার। সিটিস্ক্যান ও অন্যান্য পরীক্ষার পর প্রফেসর কবীর রুগিকে তিন-চারদিনের মধ্যে রিলিজের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে বাসায় চলে গেলেও নিয়ম মেনে রুগিকে আরও মাস খানেক বিশ্রাম নিতে হবে। আফসান সাহেবের রিলিজের কথা উঠতেই মাহিনের মনে এক ধরণের হাহাকার শনশন করে ওঠে। নীতিগতভাবে ডাক্তারদের নিরেট নির্বিকার হওয়াই বাঞ্ছনীয়, আবেগকে প্রশ্রয় দিলে চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এদিকে রাবিতাও এ ক’দিনে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। সে আর হুট করে মাহিনের কক্ষে ছুটে যায় না, তার সাথে আগের মতো অনর্থক কথাও বলে না। রাবিতার এই আকস্মিক পরিবর্তনও মাহিনকে খুব জোরে ঝাঁকুনি দেয়।
ওইদিনই মাহিন প্রথম অস্থির রাত্রি যাপন করে। সে আবিষ্কার করে রাবিতা ইতিমধ্যে তার হৃদয়ের সিঁড়িতে পদচিহ্ন এঁকে ফেলেছে। মাহিন অনেক চিন্তা করেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না।
দুদিন পর রুগির রিলিজ অর্ডার, নথি-পত্র সব গুছানো হয়ে গেলে মাহিন রাবিতাকে তার কক্ষে ডেকে পাঠায়। রাবিতা স্বাভাবিক ও শান্তভাবে মাহিনের কক্ষে গিয়ে চেয়ারে বসে।
মাহিন রুগির ফাইল থেকে চোখ না তুলেই রাবিতাকে প্রশ্ন করে, ‘কেমন আছেন?’
রাবিতা বলে, ‘খুব ভাল।’
মাহিন রাবিতার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ‘খুব ভাল’র ভাব সম্প্রসারণ করতে করতে বলে, ‘অবশ্যই, আপনার আব্বা সুস্থ হয়ে উঠেছেন, খুব ভাল থাকারই কথা।
রাবিতা কিছু বলে না।
‘কাগজ-পত্র সব রেডি; বিকেলে চলে যেতে পারবেন’, মাহিন বলে। তারপর সে চোখ কচলাতে কচলাতে বলে, ‘একটা কথা বলব ভাবছিলাম …।’
রাবিতা ঋজু ভঙ্গিতে বলে, ‘রাতে নিশ্চয়ই ঘুম হয়নি।’
‘ঠিক ধরেছেন।’
রাবিতা বলে, ‘অবশ্য ডাক্তারদের তাতে অসুবিধা নেই।’
মাহিন বলে, ‘কে বলেছে অসুবিধা নেই? ডাক্তারদেরও অসুখ হয়; চিকিৎসা নিতে হয়।’
‘তাই বুঝি?’ রাবিতা বলে, ‘তো, কী বলতে চেয়েছিলেন?’
মাহিন কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলে, ‘আপনি বলেছিলেন না যে বিয়ে না করলে আপনার আব্বা-আম্মা আপনাকে বিদেশে পড়তে যেতে দেবেন না…’
‘হ্যাঁ, বলেছি তো, যা সত্য তাই বলেছি’, রাবিতা বলে।
মাহিন বলে, ‘আমি আপনাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে চাই, মানে চেষ্টা করতে পারি। আপনি আপনার বিস্তারিত বায়োডাটার একটা কপি আমাকে দিয়ে যাবেন।’
রাবিতা মাহিনের কথা শুনে শিউরে ওঠে; তবু সে নিজেকে সংযত রাখে। মাহিনের উদ্দেশ্য আঁচ করতে পেরে ভেতরে সে তোলপাড় অনুভব করে। তবু ক্ষীণকণ্ঠে বলে, ‘আমি তো আপনার কাছে সাহায্য চাইনি।’
মাহিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও গুছিয়ে বলার চেষ্টা করে, ‘ঠিক বলেছেন। আসলে আমার মন চাইল কথাটা আপনাকে বলি, তাই।’
রাবিতা যতই শক্ত থাকার চেষ্টা করুক, সে ভেতরে প্রবল ঝড় অনুভব করছে। কথা বাড়াতে গেলে পরে আবার গুবলেট হয়ে যায় কি না ভেবে চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে সে বলে, ‘ধন্যবাদ।’
রাবিতা বেরিয়ে যাবার সময় মাহিন বলে, ‘ধন্যবাদ নয়, ওই যে বললাম, বায়োডাটা অবশ্যই দিয়ে যাবেন। আর শুনুন…’
রাবিতা কিছু বলে না, তবে প্রশ্নবোধক ভঙ্গিতে দাঁড়ায়।
‘আপনার একটা প্রশ্নের উত্তর আমার দেয়া হয়নি।’ একথা শুনেও রাবিতা নিরুত্তর থাকায় মাহিন তার বক্তব্য সম্পূর্ণ করে, ‘সেদিন মনিপুরী শাড়িতে আপনাকে খুব মানিয়েছিল।’ সাহস করে একথা বলতে পারায় সে নিজেকে ধন্যবাদ দেয়।
মাহিনের ঘরের পরিবেশ থমথমে। মা মেহেরুন্নিসার ফোলা চোখ দেখে সে বুঝতে পারে মা খুব কেঁদেছেন। মাহিন চুপচাপ নাশতা সেরে টেবিল থেকে উঠতে গেলে মা এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলেন, ‘পৃথিবীর আর যেখানে ইচ্ছা বল বাবা, আমি আপত্তি করব না। তবে ওই মজুমদার বাড়িতে আমি যাব না।’
মাহিন রাবিতার জীবন-বৃত্তান্ত মায়ের হাতে দিলে আফসান মজুমদারের নাম দেখে রাতের বেলায়ই মা চোখের পানি ছেড়ে বলেছেন, ‘তুই কাদের সাথে সম্পর্ক করার কথা বলছিস? তুই চিনিস এরা কারা? না বাবা, এদের সাথে হবে না।’
মুজাফফর সাহেব মাহিনের রুমে ঢুকে তার গায়ে হাত বুলিয়ে বেশ কিছু সময় কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেখ বাবা, তোরা বড় হয়েছিস, তোদের কাছে খুলে বলার আর কিছু নাই। যেখানে তোদের মা তার বাপের বাড়ির সাথে আটাশ বছর ধরে সম্পর্ক রাখেনি, নিজের মা-বাবার মরা মুখ দেখতে যায়নি, ওই পরিবারের সাথে আবার নতুন সম্পর্ক হবে কেমন করে? তাছাড়া ওরা যখন তোর পরিচয় জানবে তখন আরেকটা বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড হয়ে যাবে। তুই বরং এই প্রসঙ্গটা বাদ দেয়।’
মাহিন মা-বাবা দুজনের কথা শুনেছে শুধু, কোনো উত্তর দেয়নি। রাবিতার ব্যাপারটা শিমুল তূলার মতো বাতাসে উড়ে উড়ে এসে তার অস্তিত্বে লেপ্টে গেছে। এখন কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে যাওয়ায় এই হালকা ব্যাপারটা পাহাড় সমান ভারী হয়ে তার মাথার ওপর পড়েছে। গাড়ি চলে এলে আক্কেলগুড়ুম অবস্থায় মাহিন হাসপাতালে চলে যায়।
হাসপাতালে কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করেও মাহিন স্থৈর্য ফিরে পায়নি। ভেতরের ঘূর্ণিঝড় থেকে আত্মরক্ষা করতে না পেরে অবশেষে সে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। সে রাবিতাকে ফোন করে সন্ধ্যায় তার হাসপাতালে আসতে বলে। বলে, ‘ঠিক সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আপনি এসে বাইরে থেকে একটা কল দেবেন – আর শুনুন, আপনার গাড়ি না নিয়ে এলে ভাল হয়।’
সবকিছু কুয়াশার ভেতর দিয়ে এগোলেও রাবিতা আঁচ করতে পারে মাহিন নিজের জন্যই বায়োডাটা চেয়ে নিয়েছে। সঙ্গত কারণেই তার ভেতরের প্রাণ-ভোমরা গুনগুণ নয় বরং ধেই ধেই করে নাচছে। মাহিনের ফোনের জবাবে সে অভিমানী কণ্ঠে বলে, ‘না, আসতে পারব না।’
‘আসবেন না? কেন?’, মাহিন অধৈর্যভাবে জানতে চায়।
রাবিতা বলে, ‘আচ্ছা ডাক্তার সাহেব, বলুন তো, আমাকে কি গুরুজন গুরুজন মনে হয়? আমি কি আপনার সিনিয়র? আপনাকে না আমি কতবার বলেছি, আপনি, আপনি করবেন না…’
‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। সময় কিন্তু ঠিক ছয়টা।’ মাহিন যেন ভারমুক্ত হয়।
রাবিতা আজও শাড়ি পরে এসেছে। তবে মনিপুরী নয়, নকশা করা হালকা গোলাপি শিফন জর্জেট শাড়ি। আজকে তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। রেস্টুরেন্টে ঢুকে মাহিন কফির অর্ডার দিয়ে টেবিলে বসতেই রাবিতা জিজ্ঞেস করে, ‘ব্যাপার কী? এখানে নিয়ে এলেন কেন?’
‘বলব, জরুরি কথা, ধৈর্য ধরুন।’
রাবিতা চোখ বড় করে বলে, ‘আবার?’
মাহিন বলে, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। অভ্যাস তো নেই – একটু ধৈর্য ধর।’
রাবিতার মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। সে বলে, ‘বেশিক্ষণ বসতে পারব না; আব্বা ডাকাডাকি করবে। শুধু আম্মাকে বলে এসেছি।’
মাহিন পকেট থেকে একটা কাগজ বের করতে করতে বলে, ‘না, দেরি হবে না। কফি খান – মানে খাও।’
রাবিতা আবার মুখ টিপে হেসে বলে, ‘হাতে কী? পাত্রের বায়োডাটা নাকি?’
মাহিন চমকে ওঠে, রাবিতা বুঝল কীভাবে? তবে সে সিরিয়াস হয়ে বলে, ‘হ্যাঁ, তবে বিষয়টা জটিল। সে কথাটা বলার জন্য এখানে আসা।’ বলে, কাগজটা সে রাবিতার দিকে এগিয়ে দেয়।
কাগজটি পড়ার আগেই রাবিতা উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে মাহিনের দিকে তাকায়। গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সে ধারনা করে নিয়েছে মাহিন যেকোনো মুহূর্তে মুখ খুলবে। সেখানে জটিলতা আসবে কেন? ধুকপুকে বুকে রাবিতা কাগজটি খুলে মাহিনের নাম দেখে আর অন্যকিছু না পড়েই মাথাটা নিচু করে চুপ হয়ে যায়। মাহিন লক্ষ করে রাবিতার চোখ একটু চিকচিক করছে। এটা কি তবে আনন্দাশ্রু?
মাহিন যখন মনে কষ্ট নিয়ে তার মা এবং মামার বাড়ির সম্পর্কের কথা রাবিতার কাছে না বলে পারল না তখন রাবিতার মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। এ যেন এক সিনেমার কাহিনী। রাবিতা বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে তার কথিত মেহেরুন্নিসা ফুফু আসলে মৃত নন – যা সে এতদিন জেনে এসেছিল এবং মাহিন তারই পুত্র। সে বার বার তার চোখ মুছছিল আর বলছিল ‘কী দুর্ভাগ্য আমাদের।’
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোতে বেরোতে মাহিন বলল, ‘রাবিতা, মায়ের কারণেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কোনোদিন মনকে নদীর জলে ভাসিয়ে দোল খাওয়াব না। কিন্তু কেমন করে ভাসতে ভাসতে তোমার ঘাটে এসে ভিড়তে না ভিড়তেই তরী ডুবে গেল।’
রাবিতা যেন কিছুই শুনছে না বা শুনতে চাইছে না এভাবে দ্রুত বেরিয়ে এসে শাড়ির আঁচলে মুখচাপা দিয়ে এক রিকশাওয়ালাকে ইশারা করল।
মাহিন দ্রুত এগিয়ে এসে বলল, ‘চল, আমি তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। বাসা তো কাছেই।’
রাবিতা বলল, ‘না, প্লিজ, আমাকে একা যেতে দিন।’ তারপর সে মাহিনের দিকে একবারও না তাকিয়ে রিক্সায় উঠে পড়ে।
পুরো এক সপ্তাহ চলে গেলেও রাবিতা একবারও মাহিনকে ফোন করেনি। মাহিন কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো শেষের দিকে কয়েকবার ফোন দিয়েছিল; রাবিতা ধরেনি। মাহিনের পরিবারে এ নিয়ে আর কোনো কথা হয় নি। কিন্তু ওই পরিবারে কিছু ঘটল কি না তা মা-বাবার তো জানার কথা নয়, মাহিনও বুঝতে পারছে না। রাবিতার সাথে কথা বলতে না পেরে সে অস্থির হয়ে পড়ে।
বসুন্ধরার জি ব্লকের অ্যাপার্টমেন্টটিই মুজাফফর সাহেবের ঢাকার একমাত্র ঠিকানা। ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে সহজ লোন সুবিধায় ষোলশ’ বর্গফুটের এই ঠিকানা করতে পেরেই তিনি সন্তুষ্ট। এই শনিবারে মাহিনের অফ থাকলেও সে বিকেলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে – হয়তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। ঘটনা ঘটল সন্ধ্যা বেলায়। কেয়ারটেকার ইন্টারকমে যখন জানাল উত্তরা থেকে ম্যাডামের একজন বান্ধবী এসেছেন তখন মুজাফফর সাহেব ভ্রু কুঁচকিয়ে বললেন, ‘তার আবার বান্ধবী কে?’ কেয়ারটেকার বলে, ‘স্যার, জানালা দিয়ে দেখতে পারবেন, নীল গাড়ি।’ মুজাফফর সাহেব বলেন, ‘দাঁড়াও, ম্যাডামকে ডেকে দিই।’
প্ল্যান ঠিক এভাবেই করে এসেছেন আফসান দম্পতি। মেহেরুন্নিসা বেগম যখন বললেন ‘রাহেলা বেগম নামে কাউকে তো আমি মনে করতে পারছি না’ তখন রাবিতার মা বললেন, ‘আরে আপা, আপনি ভুলে গেছেন; আইডিয়াল স্কুলে আপনার ছেলে আর আমার ছেলে একসাথে পড়ত।’ ধন্দের মধ্যে পড়ে মেহেরুন্নিসা কেয়ারটেকারকে অনুমতি দিয়ে বলেন, ‘আচ্ছা, ওনাকে বলে দেন কীভাবে আসতে হবে।’
দরজা খুলে মেহেরুন্নিসা তিন-চারটা প্যাকেট হাতে যে মহিলাকে দেখলেন তাকে মোটেই চিনতে পারলেন না। রাহেলা বেগম বললেন, ‘চিনবেন। একটু বসে কথা বলি।’
মেহেরুন্নিসা দ্বিধান্বিত হয়ে বললেন, ‘আসেন।’
রাহেলা বেগম সম্ভবত জীবনে এই প্রথম এত বড় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নেমেছেন। সোফায় বসতে বসতে তিনি হাত ধরে মেহেরুন্নিসাকেও বসিয়ে বলেন, ‘ছেলে তো বাসায় নেই; ভাই নিশ্চয় আছেন?’
মুজাফফর সাহেব পর্দার ফাঁক দিয়ে আগন্তুককে দেখার চেষ্টা করছিলেন তখন। মেহেরুন্নিসা অতিথিকে বলেন, ‘আচ্ছা, আপনি তো কোনো ভুল করেননি?’
রাহেলা বেগম তখন দৃপ্তকণ্ঠে বলেন, ‘না, আমি ভুল করিনি; ভুল হয়তো অন্যরা করেছে। এজন্য আমি মাশুল দিতে পারিনা, বোন।’ বলেই, মেহেরুন্নিসাকে জড়িয়ে ধরেন তিনি।
ঘটনার আকস্মিকতায় মেহেরুন্নিসা ভড়কে গেলে মুজাফফর সাহেব এগিয়ে এসে বলেন, ‘কিছু মনে করবেন না, কী হচ্ছে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।’
রাহেলা বেগম তখন কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেন, ‘আমাকে বাঁচান ভাই, আমি খুবই বিপদগ্রস্ত। অ্যাকসিডেন্ট থেকে বেঁচে ওঠা আমার স্বামী যে কোনো সময় হার্টফেল করতে পারে। ওকে আমি আপনাদের রিসেপশনে বসিয়ে রেখে এসেছি।’
মেহেরুন্নিসা বলেন, ‘আপনার কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারছি না; আমাদের কাছে এসব নিয়ে এসেছেন কেন?’
রাহেলা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে স্যালাইন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি; ও খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। বলেছে তার বিয়ের প্রয়োজন নেই। কিন্তু তার পরিবার যে অন্যায় আচরণ আপনাদের প্রতি করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত না করলে সে না খেয়েই মারা যাবে। আর এ জন্য তার আব্বাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
মেহেরুন্নিসা লাফ দিয়ে সোফা থেকে উঠে বলেন, ‘আমার বোঝা হয়ে গেছে। আমি দুঃখিত। প্লিজ আপনি আসুন। আমরা আর ক’দিনই বা বাঁচব; এই শেষ দিনগুলি আমাদের শান্তিতে কাটাতে দিন।’
মুজাফফর সাহেব এই নাটকীয় ঘটনায় হতভম্ব হয়ে শাহিনকে ফোন দেন। এ মুহূর্তে সে-ও বাইরে কোথায় আছে। তারপর তিনি স্ত্রীকে বলেন, ‘তুমি একটু স্থির হও। আমি কথা বলি।’
রাহেলা বেগম চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘ভাই, কথা বলার আর কিছু নাই। আপনার স্ত্রী আমার বান্ধবী নয়, সে আমার ননদ। সে অন্তত আমাকে তার ভাবী বলে স্বীকৃতি দিক; আমি তো কোনো অন্যায় করিনি, আমার মেয়েও কোনো অন্যায় করেনি। আমার মেয়েকে আমি এভাবে মরতে দিতে পারি না।’
মেহেরুন্নিসা সারাজীবন লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছেন। রাহেলা বেগমের কথা শোনার পর তিনি আবার সোফায় বসে প্রকাশ্যে দুচোখ ভাসিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করেন।
মুজাফফর সাহেব অতিথির উদ্দেশে বলেন, ‘কারুর কোনো অপরাধ নেই; যা কিছু হয়েছে, হবে, সবই নিয়তি নির্ধারিত। আপনি শুধু শুধু বিব্রত হবেন কেন?’
রাহেলা বেগম বলেন, ‘ভাই, শুধু আমি না, ওরা তিন ভাই এখন লজ্জিত এবং অনুতপ্ত। কিন্তু কোন মুখে এসে আপনাদের সামনে দাঁড়াবে?’
তখন ডোরবেল বাজলে মুজাফফর সাহেব দরজা খুলতেই হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে শাহিন বলে, ‘আমাদের বাসায় নাকি এক ভদ্রমহিলা এসেছেন – তাড়াতাড়ি যেতে বল। ওনার সাথে যে ভদ্রলোক এসেছেন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন; ওনাকে গাড়িতে ওঠানো হয়েছে।
রাহেলা বেগম পাগলের মতো বেরিয়ে যেতে চাইলে মুজাফফর সাহেব বলেন, ‘দাঁড়ান’, তারপর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ক্ষমা, সম্প্রীতির দরকার নেই, চল; তোমার উদ্দেশে এসে তোমার ভাইয়ের যদি একটা অঘটন ঘটে যায় তবে তোমার কষ্টের বোঝা আরও বেড়ে যাবে। চল নিচে যাই।’
লিফট দিয়ে নামতে নামতে মাহিনকে জরুরি ফোন দেন মুজাফফর সাহেব। কিন্তু সে ফোন ধরে না। তারপর সবাই গিয়ে ভিড় করে দাঁড়ালে গাড়ি থেকে যে ভদ্রলোক কাঁপতে কাঁপতে বেরোলেন ইনিই যে আফসান সাহেব একথা জানা না থাকলে মেহেরুন্নিসাও আটাশ বছর পেরিয়ে আসা এই ভাইকে চিনতে পারতেন না। কিন্তু আফসান সাহেবের সে ধরণের সমস্যা হল না। তিনি বোনকে যেন নির্ভুলভাবে চিনে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলেন। এতে বিল্ডিং-এর প্রবেশমুখে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। ঠিক তখনই দ্রুতপদে বিল্ডিং-এ ঢুকে মাহিন এ অবস্থা দেখে সে-ও ভয় পেয়ে যায়।
মুজাফফর সাহেব তখন গলা চড়িয়ে ছেলেকে বলেন, ‘কোথায় থাকিস? দেখ ওনার শরীরটা কেমন?’
রাহেলা বেগম আস্তে করে বলেন, ‘উনি তোমার মামা।’
তিন দিন পর আফসান সাহেবের উত্তরার প্রাসাদোপম বাসায় মাহিন যখন তার মা-বাবাকে নিয়ে মামার আদেশ রক্ষা করতে যায় তখন রাবিতা ঝুলবারান্দায় বসে ফ্রুটজুস এবং অন্যসব পথ্য খাচ্ছিল। সত্যিই সে ভীষণ কাহিল হয়ে পড়েছে। মেহেরুন্নিসাকে দেখে সে ফুফু বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। মাহিন দূর থেকে দাঁড়িয়ে ফুফু-ভাইঝির বিকিরিত অশ্রুধারা দেখে আর ভাবে এ বিজয়ের একমাত্র দাবীদার রাবিতা।